60+63 বয়সে মুখে বলার শক্তি দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো না হলেও মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে নিজেকে ভেঙেছেন। গড়েছেন নতুন এক মানুষ রূপে ভাঙা গড়ার পথে বয়স বাধা নয়, তাও প্রমাণ করেছেন আত্মবিশ্বাস আর অধ্যাবসায় ভর করে সব বাধা যে উতরে যাওয়া যায় তার প্রমাণ দিয়েছেন আবেদ সিরাজ। শারীরিক প্রতিবন্ধী ৬৪ বছর বয়সী ইচ্ছাশক্তিতে আবেদ সিরাজের সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়েছেন।
আবেদ সিরাজের সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প শুরু
আবেদ সিরাজের জীবন শুরু হয়েছিল কঠিন পরিস্থিতিতে। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ছোটবেলা থেকেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যায় ছিলেন। মানুষের সঙ্গে মনের ভাব প্রকাশ করতে অনেক কষ্ট করতে হতো তাকে। তার এই সমস্যা সমাজের দৃষ্টিতে তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন করেছে। কিন্তু তিনি সবসময় ভেবেছেন, এই সমস্যা তার প্রতিভা ও মেধাকে থামাতে পারবে না।
প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ
১৯৯০-এর দশকে দেশের মধ্যে কম্পিউটারের প্রসারের সময়, আবেদ সিরাজ একটি আত্মীয়ের সাহায্যে কম্পিউটার শেখা শুরু করেন। প্রথমদিকে ডেটা এন্ট্রির কাজ করে তিনি প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী হন এবং অল্প সময়ে নিজেকে সেই ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলেন। বয়স ৬০ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও, তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে প্রশিক্ষণ নেন, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এবং আবেদ সিরাজের সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প শুরু হয়।
অধ্যাবসায় ও আত্মবিশ্বাস
আবেদ সিরাজের মধ্যে যে অধ্যাবসায় ছিল, তা তার ফ্রিল্যান্সার সফলতার মূল চাবিকাঠি। তিনি নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতেন, এমনকি অফিসের সময়ের বাইরে থেকেও। তার শৃঙ্খলা ও প্রচেষ্টার ফলে তিনি দ্রুত গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করেন।
পরিবার ও আর্থিক উন্নতি
তিনটি সন্তানের বাবা হয়ে তিনি তাদের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করেন। তার আর্থিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের ভাগ্যও বদলে যায়। তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, বরং আরও কয়েকজন যুবককে ফ্রিল্যান্সার শিখেছেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলেন। আবেদ সিরাজ একজন উদাহরণ, যিনি দেখিয়েছেন যে সত্যিকারের সংকল্প ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
সামাজিক প্রভাব
আবেদ সিরাজের গল্প আজকের যুবকদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। তিনি তাদেরকে দেখিয়েছেন যে বয়স বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা নয়। তার অধ্যবসায় এবং সাহসিকতার মাধ্যমে তিনি সমাজে একটি পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন।
অনুপ্রেরণা
এখনও নতুন নতুন বিষয় শিখে প্রতিনিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন 68 বছরের আবেদ সিরাজ। স্বপ্ন দেখছেন নতুন সম্ভাবনার এক আধুনিক বাংলাদেশ প্রশিক্ষক সন্তান বন্ধুবান্ধবের কাছে হার না মানার আদর্শ মডেল তিনি। আবেদ সিরাজের জীবন আমাদেরকে শেখায় যে "Better late than never" সত্যি অর্থেই কার্যকরী। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, যদি আপনার মনে কিছু করার ইচ্ছা থাকে এবং আপনি কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন, তবে আপনি যে কোনো বয়সে আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
আবেদ সিরাজের গল্প শুধুমাত্র একটি ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং একটি আন্দোলন হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের সকলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প জাগ্রত করে।